প্রাকৃতিক লবণের বিশাল এক ভাণ্ডার

লবণ ছাড়া কি খাবারের স্বাদ আসে! তো চলুন লবণের খোঁজে যাওয়া যাক ইতালির সিসিলির দক্ষিণ উপকূলে, ভূমধ্যসাগরের বুকে রেলমন্তে নামক এক দ্বীপে। এই দ্বীপের বিশেষত্ব হলো, এর নিচে আছে প্রাকৃতিক লবণের বিশাল এক ভাণ্ডার। ২৫ কিলোমিটারজুড়ে তৈরি হয়েছে এই লবণগুহারাজ্য।
সুড়ঙ্গ দিয়ে প্রায় ১০০ মিটার গভীরে নামলে তবেই পাওয়া যাবে এই লবণ খনি। ভেতরে দেখা যাবে, খনির দেয়াল তৈরি হয়েছে হালকা এবং গাঢ় রঙের পাথর দিয়ে। প্রাকৃতিকভাবেই পাথরগুলো এমনভাবে বিন্যস্ত যে একটি হালকা রঙের পাথরের পর একটি গাঢ় রঙের পাথর আছে। পাথরগুলো এভাবে বিন্যস্ত হয় প্রায় ৫০ লাখ বছর আগে লবণ জমা হওয়ার কারণে। মূলত গুহার গায়ে লবণ জমা হয়েছে সাগরের পানি বাষ্পীভূত এবং পানিতে থাকা লবণ অধঃক্ষিপ্ত হওয়ায়। বহু বছর ধরে এই প্রক্রিয়া চলতে চলতে এখনকার অবস্থায় এসে পৌঁছেছে। তখন ভূমধ্যসাগরের বেশ কিছু জায়গা পুরোপুরি বা আংশিক শুকিয়ে গিয়েছিল। সেই সময় জিব্রালটার প্রণালি বন্ধ হয়ে যায় ও ভূমধ্যসাগরের সঙ্গে আটলান্টিক মহাসাগর বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এতে ভূমধ্যসাগরের লবণাক্ততা বেড়ে যায়। তখন শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে পানির উচ্চতাও হ্রাস পায় আর পানিতে লবণের ঘনত্বও আরো বাড়ে।
বিভিন্ন লবণ মিশ্রিত পানি বিভিন্ন তাপমাত্রায় বাষ্পীভূত হয়, তাই শীত বা গ্রীষ্মে একই ধরনের লবণ পানি বাষ্প হয় না। এ কারণেই পাথরের হালকা ও গাঢ় রং যথাক্রমে গ্রীষ্ম ও শীতে জমা হওয়া লবণের পরিচয় বহন করে। ভূতাত্ত্বিকভাবে এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় ‘ভারভ’, আর এই ‘ভারভ’ বেশ চমত্কারভাবে সাজিয়ে দিয়েছে গুহার দেয়াল।
রেলমন্তে যে শুধু খনিই আছে তা নয়, এখানে একটি গির্জাও আছে, যার বিশেষত্ব হলো, এটি মাটির নিচে, আর তৈরি হয়েছে এই লবণ গুহার মাঝেই। গির্জাটিতে অনায়াসে ৮০০ জন মানুষের জায়গা হয়। প্রতি ডিসেম্বরে এখানে পালিত হয় সান্তা বারবারা উৎসব। রেলমন্তে প্রতিবছর প্রায় পাঁচ লাখ টন লবণ তৈরি হয়, যা এখানের মূল অর্থনৈতিক পণ্য। ধারণা করা হয়, এখনো এখানে প্রায় ১০ কোটি টন লবণ মজুদ আছে।
সৌজন্যে : কালের কণ্ঠ

No comments:

Post a Comment

Adbox