কাজাকিস্তানের রুপকথার মায়াপুরী

এ যেন ঠিক সেই রুপকথার মায়াপুরী। অদ্ভুত কোনো এক জাদুর মায়ায় দিনের পর দিন ঘুমিয়ে থাকছেন সেই মায়াপুরীর বাসিন্দারা। রুপকথার গল্প সত্যি হয়ে ফুটে উঠেছে কাজাকিস্তানের ছোট্ট শহর কালাচিতে। সোভিয়েত ইউনিয়ন আমালের একটি ইউরেনিয়াম খনির পাশে অবস্থিত এই শহরে কোনো এক রহস্যময় নিদ্রা অসুখে আক্রান্ত হয়ে দুই থেকে ছয় দিন পর্যন্ত ঘুমিয়ে থাকছেন সেখানকার অধিবাসীরা। জেগে ওঠার পর ভুগছেন স্মৃতিবিভ্রমে।
২০১০ সালে প্রথম দেখা যায় এই অদ্ভুত ব্যাপারটি। আর ২০১৩ সালের মার্চ মাস থেকে সেটা ক্রমেই বাড়ছে। ঘুমিয়ে যাওয়া ছাড়াও রহস্যময় এই রোগের অন্য উপসর্গগুলো হচ্ছে ঝিমঝিম ভাব, দাঁড়িয়ে থাকতে না পারা ও চরম শারিরীক অবসাদ। রাশিয়ান টাইমসের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একদিন এক স্কুলে হঠাৎ করেই আটজন শিশু ঘুমিয়ে পড়ে। কয়েক মাস পরে দেখা যায় একই দিনে ৬০ জন হঠাৎ করে নিদ্রার কোলে ঢলে পড়ে।
ম্যাশেবলের একটি প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে যে, এই রহস্যের কিনারা করার জন্য কিছু বিজ্ঞানী ও ডাক্তার উড়ে যান কালাচিতে। কিন্তু পরিবেশ থেকে শুরু করে রোগীর তথ্য উপাত্ত পরীক্ষা করেও কোনো উপসংহারে পৌঁছাতে পারেননি তারা। ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাল পরীক্ষার ফল নেতিবাচক। আফ্রিকান ট্রাইপানোসোমিয়াসিস নামের একটি অসুখে এধরণের উপসর্গ দেখা যায়। কিন্তু সেটা যে কারণে হয়ে থাকে তার কোনো উপাদান পাওয়া যায়নি কালাচির মানুষদের মধ্যে।
ইউরেনিয়াম খনির তেজস্ক্রিয়তার প্রভাবে এমনটা হওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না বিজ্ঞানিরা। কিন্তু সেটারও কোনো পাকাপোক্ত তথ্যপ্রমাণ হাজির করতে পারছেন না তাঁরা। কাজাকিস্তানের জাতীয় নিউক্লিয়ার সেন্টারের রেডিয়শন সেফটি এন্ড ইকোলজি ইন্সটিটিউটের পরিচালক সার্গেই লুকাশেঙ্কো বলেছেন যে তিনি মনে করেন ব্যাপারটি বর্ণহীন, তেজস্ক্রিয় গ্যাস রোডনের কারণে হচ্ছে না। সার্বিয়ান টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘এটা কার্বন মনোক্সাইডের কারণে হতে পারে। এই অঞ্চলের অদ্ভুত অবস্থান ও আবহাওয়া পরিস্থিতির কারণে আমাদের কেউ কেউ এমন সন্দেহ করছে। এখানে চিমনির ধোঁয়া ওপরে উঠে যাওযার বদলে নিচে ও চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে। কার্বন মনোক্সাইডের কারণে প্রায়ই মাথাব্যাথা, বমি ও অবসন্ন ভাব আসতে পারে। কিন্তু এই উদ্ভট ঘুমিয়ে পড়ার ব্যাপারটা সেটা দিয়েও ব্যাখ্যা করা যায় না।’
অদ্ভুত এই রোগের কারণে কালাচি শহরের অনেকেই পাড়ি জমিয়েছেন অন্য কোথাও। যারা আছেন তাঁরাও এখন অন্য কোথাও চলে যাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন। তেমনই একজন ওলগা সামুসেঙ্কো জানালেন নিজের ভয়াল অভিজ্ঞতার কথা, ‘সেপ্টেম্বরের এক তারিখে আমরা ছেলেমেয়েদের স্কুল প্যারেডে গিয়েছিলাম। আমার বাচ্চাটা ছোট। ফলে আমরা শুধু দেখতেই গিয়েছিলাম। তারপর (দুই বছর বয়সী) স্টানিস্লাভ বাড়ির উঠোনে কিছুক্ষণ খেলে ৪টা নাগাদ বাড়িতে ফিরেছে। ফিরেই সে ঝুপ করে মাটিতে পড়ে যায়। সে দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিল না। বসতেও পারছিল না। আমি তাকে দাঁড়া করানোর চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু সে বারবার পড়ে যায়। তার দৃষ্টি ছিল অন্য কোথাও। মনে হচ্ছিল যেন মাতাল হয়ে আছে। খুবই ভয় পেয়েছিলাম। আমাদের এখন এখান থেকে চলে যেতে হবে। এখানে কোনো ভবিষ্যৎ নেই। সবাই চলে যাচ্ছে। অনেকেই তাদের ছেলেমেয়েকে দূরে অন্য কোনো শহর বা গ্রামে রেখে এসেছে আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে। কেউ কিছু ব্যাখ্যাও করতে পারছে না। আমরা কেউই জানি না কী ঘটছে।’

No comments:

Post a Comment

Adbox