অন্যরকম উত্‍সব ‘টমোটো উত্‍সব’

পৃথিবীতে কত রকম উত্‍সবের কথাই না শোনা যায়। তেমনি এক অন্যরকম উত্‍সব ‘টমোটো উত্‍সব’। ভুমধ্যসাগরের প্রায় কোলের মধ্যে থাকা বুনিয়াল শহর। স্পেনের ভ্যালেন্সিয়া প্রদেশের স্বায়ত্তশাষিত এই এলাকা এমনিতেই নিজস্ব সংস্কৃতিতে ভরপুর। আগষ্ট মাসের শেষ সপ্তাহজুরেই উত্‍সবের আমেজে কিন্তু এগুলোর মাঝে মুল আকর্ষন হল টমেটো উত্‍সব। দুনিয়াজোড়া পরিচিতি পাওয়া এই টমেটো উত্‍সবর নাম ‘লা টমাটিনা।’
সময়কালঃ প্রতিবছরের আগষ্ট মাসের শেষ বুধবার এই উত্‍সবের আয়োজন করা হয়। সে হিসেবে: 
#২০১৬-৩১ শে আগষ্ট।
#২০১৭-৩০ শে আগষ্ট লা টমাটিনা অনুষ্ঠিত হবে।
ইতিহাসঃ লা টমাটিনা টমেটো উত্‍সব শুরু হওয়ার ব্যাপারে লোকমুখে অনেক কথা শোনা যায়। ধারনা করা হয় বুনিয়াল শহরে মাপেটের মিছিলে কোন এক বাজে গায়ককে উদ্দেশ্য করে টমেটো ছুড়ে মারা হয়। এই টমেটো ছুড়ে মারা থেকেই নাকি টমেটো উত্‍সবের শুরু।
আবার অনেকেই মনে করে টাউনহলের এক কর্মকর্তার সংগে বিবাদের জের ধরে শহরের লোকেরা তাকে টমেটো ছুড়ে মারে। কারও কারও মতে তো এগুলো নয় টমেটো উত্‍সবের শুরুটা হয় রাস্তায় কাত হয়ে পরা একটি টমেটো বোঝাই লড়ি থেকে। সেখানে পরে থাকা টমেটোগুলো মানুষ কুড়োতে গিয়ে হই হুল্লোর বেধে যায় আর সেখান থেকেই শুরু টমেটোর উত্‍সব।
যেভাবেই শুরু হোক না কেন একটি ব্যাপারে সবাই একমত, শহরের কোতোয়াল এসে লড়াই থামিয়েছিল এবং পরের বছর থেকে শহরবাসীরা নিজেরাই এ লড়াই অব্যহত রাখে। ফলশ্রুতিতে আজকের এই লা টমাটিনা টমেটো উত্‍সব। কেউ সঠিকভাবে না বলতে পারলেও মনে করা হয় ১৯৪৪ অথবা ১৯৪৫ সালে এ উত্‍সব চালু হয়।
মাত্র ৯ হাজার লোকের বসবাস এই বুনিয়াল শহরে। ২০১৩ সালের পূর্ব পর্যন্ত প্রায় ৪০,০০০ থেকে ৫০,০০ পর্যটক হত যা শহরের নাগরিকদের তুলনায় অনেক গুন বেশি।এত মানুষের ভীর সামাল দেয়া এবং শৃঙ্খলা বজায় রাখা কর্তৃপক্ষের কাছে অসম্ভব হয়ে পরছিল। আর তাই শহরের কর্তৃপক্ষগন এত মানুষের ভীর নিয়ন্ত্রন করার জন্য টিকিটের ব্যবস্থা করে। ফলে এখন ২০,০০০ হাজার ভাগ্যবান দর্শকই উত্‍সবে আসার সুযোগ পান।
Please Remember No Ticket No Entry.
তাই টিকিট অবশ্যই রাখতে হবে।
খরচঃ টিকিট মূল্য জনপ্রতি ১০ ইউরো। এটা তো শুধু অনুমতি পত্র থাকা-খাওয়া আর যাতায়াতের ব্যবস্থা নিজেকেই করতে হবে। আর এ জন্য আছে ডজন ডজন ট্যুরিস্ট কোম্পানি।
দা গার্ডিয়ান এর এক প্রতিবেদনে দেখা যায় ১০০ মেট্রিক টন অতিপাকা টমেটো আনা হয় গ্রামের খামারগুলো থেকে। এক ঘন্টা লড়াইয়ে ব্যয় হয় ১লাখ ৪০ হাজার ইউরো। তাহলে প্রতি ঘন্টায় খরচ পরে ২ হাজার ৩০০ ইউরো।
উত্‍সবের শুরুঃ সকাল ১১টায় বুলিয়ালের শহরকেন্দ্র প্লাজা ডেল পুয়োবলায় এসে জড়ো হয় অতি পাকা টুমটুমা টমেটো ভর্তি ট্রাকের সারি। শহর কেন্দ্রের চত্তরে রাখা থাকে দোতলা সমান উঁচু একটি গ্রীজ মাখা থাম। সেই থামের শেখরে রাখা থাকে একটি হ্যাম (মাংশজাত খাবার)। কোন সাহসী প্রাণী যতক্ষন পর্যন্ত ঐ তৈলাক্ত থাম বেয়ে শিখরের হ্যাম নিতে না পারে ততক্ষন উত্‍সবের শুরু হয়না। কিন্তু বাস্তবে তা কখনই হয়না। টাউনহল থেকে ছোড়া জলকামানের জলদ গম্ভীর জোলার শব্দের সংগে সংগেই লড়াই শুরু হয়ে যায় হুল্লোরে মাতে সবাই।
গুরুত্বপূর্ন তথ্যঃ চোঁখ বাঁচানোর জন্য গোগলস পরার পরামর্শ দেন কর্তৃতপক্ষ। টমেটো যত পাকাই হোক না কেন অন্যের দিকে ছোড়ার পূর্বে হাতে চেপে চ্যাপটা করে নিতে হবে যাতে করে অন্য কেউ ব্যাথা না পায়। পানির বোতল বা গ্লাস নিয়ে আসতে পারবেনা কেউ।একে অপরের টি শার্ট কেউ ছিড়তে পারবেনা। লড়ি বা ট্রাক গুলো থেকে যথেষ্ঠ দুরত্ব বজায় রাখতে হবে।
যদি কারও ছবি তোলার ইচ্ছে থাকে তবে ওয়াটার প্রুফ ক্যামেরা সংগে রাখুন। জল কামানের দ্বীতিয় ঘন্টা বাজার সাথে সাথে সকলকে থামতে হবে। তখন আর কেউ একে অন্যের দিকে টমেটো ছুড়তে পারবেনা বা করতে পারবেনা নাজেহাল। লড়াই শেষে চলে রাস্তা পরিস্কার অভিযান। বর্তমানে লা টমাটিনা টমেটো উত্‍সবের জনপ্রিয়তা দেখে অনেক দেশেই এর আদলে এমন উত্‍সবের আয়োজন করছে। চীন, যুক্তরাষ্ট্র, কলম্বিয়া এবং চিলি তাদের মাঝে অন্যতম। সাবধান থাকুন এবং সুস্থভাবে উপভোগ করুন লা টমাটিনা উত্‍সব।

No comments:

Post a Comment

Adbox