নাফাখুম (বাংলাদেশের নায়াগ্রা) -ই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জলপ্রপাত

নাফাখুম নিয়ে জানার ইচ্ছে?
নাফাখুম জলপ্রপাত (বাংলাদেশের নায়াগ্রা) নামকরণ কেন?
বান্দরবান জেলার থানচি উপজেলার রেমাক্রি স্থানটি সাঙ্গু নদীর উজানে একটি মারমা বসতী। মারমা ভাষায় ‘খুম’ মানে হচ্ছে জলপ্রপাত। রেমাক্রি থেকে তিন ঘন্টার হাঁটা পথ পাড়ি দিয়ে যেতে হয় আশ্চর্য সুন্দর সেই জলপ্রপাতে, যার নাম ‘নাফাখুম’।
রেমাক্রি খালের পানি প্রবাহ এই নাফাখুম, নাফাখুমে এসে বাঁক খেয়ে নেমে গেছে প্রায় ২৫-৩০ ফুট, প্রকৃতির খেয়ালে সৃষ্টি হয়েছে চমৎকার এক জলপ্রপাত! সূর্যের আলোয় যেখানে নিত্য খেলা করে বর্ণিল রংধনু! ভরা বর্ষায় রেমাক্রি খালের জলপ্রবাহ নিতান্ত কম নয়। প্রায় যেন উজানের সাঙ্গু নদীর মতই।
পানি প্রবাহের ভলিউমের দিক থেকে নাফাখুম-ই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জলপ্রপাত।
নাফাখুমের পড়ন্ত জলের ধারার নীচে গিয়ে বসার সুযোগ রয়েছে। আমার-আপনার জন্য বিষয়টা বেশ রিস্কি হলেও পাহাড়ীরা জলপ্রপাতের পিছনে বসে অনায়াসে মাছ শিকার করে। এক ধরনের উড়ুক্কু মাছ (স্থানীয় ভাষায় মাছটির নাম নাতিং মাছ) উজান ঠেলে এসে নাফাখুমে বাধাপ্রাপ্ত হয়, লাফ দিয়ে এই প্রপাত-টা আর ক্রস করতে পারেনা, গিয়ে পড়ে জলপ্রপাতের ভিতরে ছোট্ট একটা গুহায়। অনায়াসে সেখান থেকে মাছ সংগ্রহ করে স্থানীয় পাহাড়ীরা।
যেই দেশে এত এত “খুম” আছে, তা কয়জনই বা জানে? মুসা ইব্রাহিম নাফাখুম গিয়ে জানান দিয়েছে এমন একটা যায়গা আছে যে পাহাড়ের মাঝে ঝরণার পানি জমে যেটাকে খুম বলে এলাকাবাসী।
খুম কি? নাম কেন খুম? জানার ইচ্ছে?
মারমা ভাষায় খুম মানে হল জলপ্রপাত। পাহাড়ী নদী সাঙ্গু তার বয়ে চলার পথে অজস্রে স্থানে ছোট ছোট জলপ্রাপাতের সৃষ্টি করেছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে রেমাক্রিখুম এবং নাফাখুম আর এখন আমিয়াখুম সাতভাইখুম আছে। নাম না জানা আর কত খুম আছে সেটা জানার আর দেখার ভাগ্য আমাদের হবে কিনা জানি না।
রেমাক্রি খুম-
আমিয়াখুম​-
সাতভাইখুম-
যাতায়াতঃ
বান্দরবান শহর থেকে থানচি উপজেলা সদরের দূরত্ব ৮২ কিঃমিঃ। রিজার্ভ চাঁদের গাড়ীতে বান্দরবান থেকে থানচি যেতে সময় লাগবে ৩ ঘন্টা, ভাড়া নেবে ৪ হাজার টাকা। থানচি থেকে রেমাক্রি নৌকায় যাওয়া-আসা, ভাড়া চার হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা। বর্ষায় ইঞ্জিনবোটে থানচি থেকে তিন্দু যেতে সময় লাগবে আড়াই ঘন্টা। তিন্দু থেকে রেমাক্রি যেতে লাগবে আরও আড়াই ঘন্টা। এই পাঁচ ঘন্টার নৌ-পথে আপনি উজান ঠেলে উপরের দিকে উঠতে থাকবেন। শীতের সময় ইঞ্জিন বোট চলার মত নদীতে যথেষ্ট গভীরতা থাকেনা। তখন ঠ্যালা নৌকাই একমাত্র বাহন। বর্ষা মৌসুমে তিন দিনের জন্য ইঞ্জিনবোটের ভাড়া পড়বে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা। আর শীত মৌসুমে ঠ্যালা-নৌকার ভাড়া পড়বে প্রতি দিনের জন্য ১০০০ টাকা।
যাবার পথে তিন্দু পড়বে, তিন্দু সম্পর্কে পড়ুন ও দেখুন এখানে-
তিন্দু ইউনিয়ন, বাংলাদেশের বান্দরবান জেলার থানচি উপজেলার একটি প্রশাসনিক এলাকা। প্রাকৃতিক আকর্ষণের কারণে এ্যাডভেঞ্চারপ্রেমী পর্যটকদের কাছে অঞ্চলটি একটি আকর্ষণীয় পর্যটন স্থান। তিন্দু ইউনিয়নের আয়তন ১,১২,৬৪০ একর (৪৫৫.৮৪ বর্গ কিলোমিটার)।
সাঙ্গু নদী এই উপজেলার বুক চিরে বয়ে চলেছে। তিন্দু ইউনিয়নের উত্তরে থানচি ইউনিয়ন, দক্ষিণে রেমকরি ইউনিয়ন (রেমাক্রি), পূর্বে চীন (মায়ানমার) সীমান্ত।
বাংলাদেশের ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দের আদমশুমারি অনুযায়ী তিন্দু ইউনিয়নের জনসংখ্যা ২০৪৮ জন। সাক্ষরতার হার ৪.৬%।
তিন্দু মাতৃতান্ত্রিক মারমা ও মুরংদের আবাসস্থল। এরপর আদমশুমারী এই এলাকায় আর হয়নি।
প্রধান ফসলের মধ্যে রয়েছে ধান, তিল, হলুদ, আদা এবং শাকসবজি। প্রধান ফল কাঁঠাল, কলা। তিন্দুতে রয়েছে একটি বাজার এবং একটি বৌদ্ধ মন্দির।
মোবাইল নেটওয়ার্কঃ
থানচি, তিন্দু দুই জায়গাতেই মোবাইল নেটওয়ার্ক (জিপি, রবি, টেলিটক, সিটিসেল) আছে। নিজের মোবাইল সাথে না নেয়াই ভালো। বারতি বোঝা বলে মনে হবে। দোকান থেকেই প্রয়োজনীয় কথা সেরে নিতে পারবেন। নিলেও নোকিয়া জাভা সেট নিয়ে যাবেন, চার্জ অনেক দিন থাকে। থানচি পর্যন্ত আপনার টেলিটক/রবি/জিপি মোবাইলের নেটওয়ার্ক পাবেন। তিন্দু গিয়ে আপনার মোবাইলে নেটওয়ার্ক না থাকলেও আপনি একেবারে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হবেন না। মারমাদের দোকান থেকে বাঁশের উপর এ্যন্টেনা লাগানো সেট থেকে চাইলে বাইরের পৃথিবীর সাথে যোগাযোগ করতে পারবেন। কিন্তু রেমাক্রি পৌঁছালে আপনি একেবারেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বেন।
থাকাঃ
থাকার জন্য যেতে হবে তিন্দু, রেমাক্রি। মারমাদের বাঁশ-কাঠের বাড়ীতে অনায়াসে থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা হয়ে যাবে আপনাদের। মারমাদের প্রায় প্রতিটি বাড়ীতেই খুব অল্প টাকায় এমন থাকা-খাওয়ার সুবিধে রয়েছে। তিনবেলা খাওয়ার খরচ পরবে জনপ্রতি ২০০ টাকা, আর থাকা ফ্রি। তবে যে বাড়ীতে ফ্রি থাকবেন। খেতে হবে তাঁর দাওয়ায় বসেই।
আর্মি বা বিডিআর-এর রেফারেন্স থাকলে তিন্দু ও রেমাক্রিতে বিডিআর-এর আতিথেয়তা পেতে কষ্ট হবেনা। আর বিডিআর-এর আতিথেয়তা পেলে থাকা-খাওয়ার সম্ভাব্য সর্বোত্তম ব্যবস্থা-টা সহজেই মিলে যাবে। সাথে উপরি পাবেন নিশ্চিন্ত নিরাপত্তা। 
সৌজন্য: বিডিনিউজ২৪.কম

No comments:

Post a Comment

Adbox