উঁচু নীচু পাহাড়ের ফাঁকফোকর দিয়ে এঁকেবেঁকে মাটির পথ আর প্রকৃতির সবুজের সাজসজ্জায় ভরপুর প্রাকৃতিক নৈস্বর্গের লীলাভূমি ভুটান।
হিমালয়ের পূর্ব কোণে প্রাকৃতিক অপরূপ সৌন্দর্যের দেশ ভুটান। দেশটির সরকার অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সুশাসন ও সংস্কৃতিতে অত্যন্ত মনোযোগী একটি রাষ্ট্র। ভুটানের কর্মঠ মানুষগুলোর মুখে লেগে থাকা হাসি দেখলেই বোঝা যায় তারা কতটা সুখী। ভুটানের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর ঐতিহাসিক এবং প্রাচীন ঐতিহ্যের সংরক্ষণে থাকা বগু নিদর্শন পর্যটকদের মূল আকর্ষণ। উন্নত সভ্যতার মাঝেও এখানে মিলবে সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের এক বিরাট অনুভূতি। উত্তরে চীনের তিব্বত এবং দক্ষিণ-পূর্ব ও পশ্চিমে মহাভারত।
ভুটান শব্দটি মূলত সংস্কৃত শব্দ, যার বাংলা আভিধানিক উঁচু ভূমি। ভুটান এমন একটি দেশ, যেখানে প্রকৃতির মাঝে অবসর কাটানোর জন্য পৃথিবীর বুকে অনন্য একটি দেশ।
কখন যাবেন ভুটান : শীতকাল ভুটানে বেড়ানোর উপযুক্ত সময় নয়। মূলত আগস্ট থেকে অক্টোবর এই তিন মাস ভুটানে বেড়ানোর উৎকৃষ্ট সময়। আর এ সময়ে ভুটানে পর্যটকদের ভিড় বেশি থাকে। বর্ষাকালে ভুটানে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয় বলে এ সময়টা এখানে বেড়ানো কঠিন। ভ্রমণের জন্য দেশটি বেশ নিরাপদ। পর্যটকরা স্বাচ্ছন্দ্যে তাদের পছন্দের স্থানগুলোতে ঘুরতে পারেন।
কীভাবে যাবেন : ভ্রমণপিপাসুদের জন্য ভুটান ভ্রমণ বেশ সহজ ও সুবিধাজনক। এখানে ভ্রমণের জন্য আগে থেকে ভিসার প্রয়োজন হয় না। এয়ার কিংবা বাইরোডে দেশটিতে প্রবেশের পর পাসপোর্ট জমা দিলে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই অনুমোদন পেয়ে যাবেন।
ঢাকা থেকে ভুটান যাওয়ার জন্য সহজ পন্থা হচ্ছে ভুটানি বিমান ড্রুক এয়ারলাইন্স। এ ছাড়া সড়কপথে ভারত হয়ে ভুটান যাওয়ার বিকল্প একটি পথ রয়েছে। আকাশপথে ঢাকা থেকে ভুটানে পৌঁছতে সময় লাগে মাত্র দেড় ঘণ্টা। বিমানে করে ভুটানে যাওয়ার সময় পর্যটকদের এক অদ্ভুত অভিযানের সৃষ্টি হয়। বিমানটি যখন ভুটানের মাটি স্পর্শ করবে, তখন বিমান থেকে বাইরে তাকালে পাহাড়ের ফাঁকফোকরে নামার সময় মনে হবে এই বুঝি পাহাড়ের সঙ্গে ধাক্কা লাগবে।
প্রবেশ পদ্ধতি : পর্যটকদের জন্য এখানে ভিসা প্রক্রিয়া একটু ভিন্ন। ভুটান সরকার সরাসরি ভিসা প্রদান করে না। বাইরোডে ভুটান প্রবেশের আগে ইন্ডিয়ান ইমিগ্রেশন অফিস থেকে পাসপোর্টে বহির্গমন স্ট্যাম্প লাগিয়ে নিতে হয়। এরপর ভারত হয়ে ভুটান গেটে অবস্থানরত ভুটানের বর্ডার গার্ডকে ভারতের ইমিগ্রেশন অর্থাৎ ভিসা ছাড়পত্র প্রদর্শন করলেই আপনাকে ভিসার অনুমোদন দিয়ে দেবে। এ জন্য আপনাকে খরচ করতে হবে মাত্র ২০ ডলার। অতঃপর ছাড়পত্র ডকুমেন্টে প্রদত্ত সময়সীমা অনুসারে ভুটান কর্তৃপক্ষ ভিসা প্রদান করবে।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র : সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডে এক কপি পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি, পাসপোর্টের ফটোকপি ও মূলকপি। বাচ্চাদের তিন কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবিসহ মায়ের পাসপোর্টের ‘সি’ ফরমে সংযুক্ত করতে হয় (যদি প্রয়োজন হয়)। জাতীয় পরিচয়পত্রের দুই কপি ফটোকপি এবং ব্যাংক সলভেন্সি স্টেটমেন্ট ভুটান গেটের অভ্যন্তরে অবস্থিত ইমিগ্রেশন অফিসে প্রদান করতে হবে।
থাকা-খাওয়া : পারো বিমানবন্দর থেকে বাইরে এলেই বিভিন্ন ট্যাক্সি পেয়ে যাবেন। ট্যাক্সি ড্রাইভারকে বললে সে আপনাকে বিভিন্ন মানের হোটেল কিংবা রেস্টুরেন্টের সন্ধান দেবে। এ ছাড়া অনলাইনেও আপনি ভুটানের বিভিন্ন হোটেল বুকিং দিতে পারবেন। এখানে ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্টে সব ধরনের বাঙালি খাবার পাবেন। পরিচ্ছন্ন পরিবেশে খেতে চাইলে ড্রক হোটেলের রেস্তোরাঁয় যেতে পারেন।
দর্শনীয় স্থান : ভুটান প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ এক দেশ। পুরো ভুটানে প্রাচীন ঐতিহ্য আর সংস্কৃতিতে ভরপুর। এখানকার বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের বহু প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন পর্যটকদের মূল কেন্দ্রবিন্দু। এখানে দেখার মতো অনেক দর্শনীয় স্থান রয়েছে।
থিম্পু : ভুটানের আকর্ষণীয় এবং নান্দনিক সৌন্দর্যের অন্যতম অবস্থান থিম্পু। এ স্থানটি দেশের সংস্কৃতির মূল কেন্দ্রবিন্দু। এখানে রয়েছে সিমতোখা জং। রয়েছে প্রাচীন ১৬২৭ সালের তৈরি থিম্পু ভ্যালির গেটওয়ে। থিম্পুর প্রাণ থিম্পু জং। এটাও প্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক অন্যতম নিদর্শন, যা তৈরি করা হয় ১৬৬১ সালে। দ্য ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি, রাজার থ্রোন রুম, ভুটানের তৃতীয় রাজা জিগমে দরজি ওয়াঙ চুকের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে ১৯৭৪ সালে এ স্তূপটি তৈরি করা হয়। এর ভিতরে নান্দনিক অঙ্কন ও মূর্তি রয়েছে। থিম্পু শহর থেকে ৭০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত পুনাখা। হিমালয় দেখার জন্য এটি আদর্শ স্থান। ভুটানের সবচেয়ে উঁচু স্থান পুনাখা। পুনাখা জং, ফো ছু এবং মো ছু নদীর বৈচিত্র্যও দেখতে পাবেন এখান থেকে।
পারো : প্রাকৃতিক দর্শনীয় স্থাপনার সাম্রাজ্য ভুটানের আরও দর্শনীয় স্থানের মধ্যে অন্যতম পারো। হিমালয়ের কোলে অবস্থিত ছোট্ট শহর পারো রূপ-বৈচিত্র্যে অপরূপ। বিশেষ করে বসন্তে পারোর রূপ ফুটে ওঠে। এখানে রয়েছে পারো জং, ন্যাশনাল মিউজিয়াম। এ অঞ্চলের সব থেকে বড় আকর্ষণ টাইগার্স নেস্ট।
বুমথাং : বুমথাংকে বলা হয় ভুটানের আধ্যাত্মিক হৃদয়ভূমি। কারণ, ভুটানের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ জং মন্দির এবং মহল এ অঞ্চলে অবস্থিত। এখানে আরও আছে ওয়াংগডিচোলিং প্যালেস, জাম্বে লাখাং মন্দির, ভুটানিজ মন্দির জাকার এবং হট স্প্রিং এরিয়া।
দচু লা পাস : হিমালয়ের কোল ঘেঁষে গড়ে ওঠা দচু লা পাস এক অপরূপ মহিমা। পাহাড়ে ঘেরা অসংখ্য মন্দির আর মেঘালয়ের মেঘের খেলা সদা বিচরণ করে এখানে। দ্রুকওয়াংগাল লাখাং মন্দিরটি এখানকার আকর্ষণীয় স্থান। ১০৮টি চোর্টেন্স রয়েছে, যা ভারতীয় যুদ্ধে নিহত ভুটানের সেনাদের স্মরণে ২০০৩ সালে নির্মাণ করেছিলেন ভুটানের রানী মাতা আশি দর্জি ওয়াংমো ওয়াংচু।
গ্যাংটি : ২৯০০ মিটার উচ্চতার অসম্ভব সুন্দর একটি বরফের উপত্যকা। এখানে পর্যটকদের জন্য আরোহণ এক চমকপ্রদ আকর্ষণ। পাহাড়ে ঘেরা নির্মিত ছোট্ট শহরটি প্রায় সবসময়ই বরফের রাজ্য হিসেবে স্থানীয়দের কাছে পরিচিত। এখানে নাকাই চু ও গে চু নামের দুটি সুন্দর নদী রয়েছে।
সৌজন্যে : বাংলাদেশ প্রতিদিন
No comments:
Post a Comment