কক্সবাজার ভ্রমন টিপস

আপনারা যারা ককসবাজার যাবেন/যাচ্ছেনঃ
* হিমছড়ি পার হয়ে ইনানীর আগে রেজু খালের ব্রীজের গোড়ায় বিজিবির একটি চেক পোষ্ট আছে। সেই চেক পোষ্টের হাতের বাম দিকে যে চিকন রাস্তাটি দেখবেন, নির্দ্ধিধায় চলে যান। পারলে সাইকেলে যাবেন অথবা গ্রুপ করে হেঁটে অথবা মোটরসাইকেল হলে কথায় নেই! এই রোডের অল্প কিছুদূর পর একটি ভাঙ্গা ব্রীজ পাবেন, যাতে কাঠের একটি সেতু দিয়ে চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। জায়গাটির নাম গোয়ালিয়া পাড়া। চমৎকার একটি ভ্রমণ স্থান, যারা সচরাচর ককসবাজার দেখতে দেখতে বিরক্ত শুধুমাত্র তাদের জন্য এই প্লেসটি মনে রাখার মত। আশে পাশে অনেকগুলো বৌদ্ধ মন্দির পাবেন, যা রামু ট্র্যাজেডির সময় অগ্নিকান্ডে ভস্মীভূত হয়েছিল। এই এলাকার লোকগুলি একদম অরিজিন ককসবাজারের। তাদের সাথে মিশলেই বুঝবেন, কি মিশুক এবং অমায়িক ভাল মানুষ। রাস্তাটি ককসবাজার-টেকনাফ সড়কে গিয়ে মিশেছে, ওখান থেকে অন্য দিকে মুভ করা একদম ইজি।
* সচরাচর যারা ককসবাজার দেখতে দেখতে বোরড, তারা ৪/৫ জনের গ্রুপ নিয়ে নাজিরারটেকে চলে যাবেন। নাজিরারটেক ককসবাজারের সর্ব ডানের শেষ বিন্দু। এখানে সব শুঁটকি মাছের আড়ত। যে কোন একটি আড়তে গিয়ে মালিকদের সাথে মিশে যাবেন, কথা বলবেন, তারা যে আন্তরিকতা দেখাবে, ভুলবেন না জীবনে। একদম ‘র’ যাঁদের পছন্দ, সেই সাগর তীরে, শুঁটকি আড়তে রাত কাটাবেন শ্রমিকদের সাথে, জীবনের অন্যরকম মনে রাখার মত অভিজ্ঞতা পাবেন। অন্তত সমুদের তাজা মাছ খেয়ে জীবন সার্থক হবে, নিশ্চিত। আপনার কাছ থেকে খাওয়া/রাতে থাকা বাবদ একটা কানাকড়িও নেবে না, যদি আপনিও সেই পরিমাণ আন্তরিকতা, সৌজন্যতা দেখাতে পারেন।
* অন্য রকম একটি বোটানিক্যাল গার্ডেন করা হয়েছে, রামুতে। যারা আগ্রহী, রামু চৌমহনী হতে ক্যান্টনমেন্ট যাবেন। ‘স্বর্ণ ফুল’ নামক একটি বিরল প্রজাতির ফুল দেখার সৌভাগ্য জীবনে যোগ হবে, সাথে বিস্তীর্ণ পরিবেশে আদি এবং অসাধারণ সবুজের মাঝে ফটোসেশন, বোনাস।
* ইনানী পার হয়ে শাহ পরীর দ্বীপের আগে, নতুন মেরিন ড্রাইভ রোড ধরে মৌলভীর ডেইল নামক স্থানে তাঁবু খাটাতে পারেন। প্রয়োজনে বন বিভাগের রেস্ট হাউসে থাকতে পারেন, চার্জের বিনিময়ে। এই সমুদ্র এবং পরিবেশ বিরল ও আনকমন। এই স্থানের পানি প্রায় নীলের চেয়েও বেশি নীল, স্বচ্ছ।
* সূর্য্যাস্ত দেখতে নতুন দুটি স্থানে যেতে পারেন। একটি ককসবাজার থেকে দুই কিমি দূরে নব নির্মিত চৌফলদন্ডী ব্রীজ থেকে (এটি এখন স্থানীয়দের একটি পর্যটন স্পটে পরিণত হয়েছে), অন্যটি নব নির্মিত মহেশখালী-বদরখালী ব্রীজের উপর থেকে। অসাধারণ এবং অনন্য!
* যারা লবণ উৎপাদন দেখতে চান, সরাসরি মহেশখালী অথবা টেকনাফ চলে যান। সারাদিন তাদের সাথে লবণ মাঠে থাকুন। অন্তত, একটা কিছু শিখবেন।
*টেকনাফের সৌন্দর্য যারা দেখতে চান, কষ্ট করে শাহ পরীর দ্বীপে চলে যাবেন। এখানে একটি রেস্ট হাউস আছে, সুন্দর থাকার ব্যবস্থা, সাথে বিজিবির নিরাপত্তা। জেটিতে বসে রাত কাটালে, বাকি জীবন সেই রাতের কল্পনা করেই পগারপার করে দেওয়া সম্ভব।
** মনে রাখবেন, যেখানেই নিরাপত্তা বাহিনী আপনাকে চেক করতে চাইবে, উনাদের সহযোগিতা করুন। নিরাপত্তা বাহিনী আপনার শত্রু নন, যদি আপনি অপরাধী বা মাদক বহনকারী না হন। উনাদের কাজই হচ্ছে অরিজিনাল পর্যটকদের নিরাপত্তা এবং ভরসা দেওয়া। আপনার চোখ দেখলেই উনারা অনেক কিছু বুঝে নেন, কে অপরাধী আর কে ভাল মানুষ। ভাল মানুষের সুবিধা সর্বত্র।
** ভুলেও পর্দা না টেনে রুমের লাইট জ্বালাবেন না। ককসবাজারে পাশাপাশি এত পরিমাণ হোটেল, পাশের হোটেলের রুম থেকে আপনার রুম নিজের চোখের সামনের হাতের চেয়ে স্পষ্ট। সুতরাং, সাধু সাবধান!
** যারা সেন্ট মার্টিন যান, খুশির চোটে প্রবাল পাথরে খালি পায়ে ছবি তুলতে যাবেন না, বিশেষ করে মেয়েরা। প্রবাল পাথর অত্যন্ত ক্ষুরধার।
** যে কোন হোটেলের রিশিপশানে, টমটম/ট্যাক্সির পেছনে টুরিস্ট পুলিশের যোগাযোগ নাম্বার পাবেন, সংগ্রহে রাখুন, প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন
::
কক্সবাজার যারা বেড়াতে যাবেন তারা বিষয় গুলো মনে রাখবেন

১। পিক টাইমে কক্সবাজার বেড়াতে যাবার প্ল্যান না করাই ভালো। হোটেলের ভাড়া সহ যে কোন স্বাভাবিক খরচ আপনার কয়েকগুন বেশি হবে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, আপনি কোথাও ঘুরে শান্তি পাবেন না।
২। অফ পিক টাইমে কক্সবাজারে বেড়াতে গেলে আপনি ১২০০ টাকা থেকে ২৫০০ টাকায় অনেক ভালো হোটেল পাবেন। আপনাদের যদি প্ল্যান থেকে যে, দিনের অধিকাংশ সময় আপনারা বীচে আর বিভিন্ন জায়গায় ঘুরাঘুরি করে কাটাবেন, তাহলে হোটেলে বেশি খরচ না করাই ভালো। আর যদি একদম রিলাক্স করার জন্য যান, তাহলে হোটেলটা ভালো নিতে পারেন। এটা অবশ্যই যার যার বাজেটের উপর নির্ভর করবে। যদি কারো বাজেট পার নাইট ৫/৬ হাজার হয়, তাহলে আমি রেকমেন্ড করব হোটেল স্যায়মান এ থাকার জন্য। এই হোটেলে থাকলে একটাই সমস্যা হবে, আপনার আর অন্য কোথাও থাকতে ইচ্ছে করবে না। আমার মতে এই মুহুর্তে কক্সবাজারের সেরা হোটেল হচ্ছে এটি।
৩। অফ পিকে কক্সবাজার থেকে ইনানী বীচে ৭০০/৮০০ টাকায় আপনি অটোতে যেতে পারবেন। আর পিক টাইমে গেলে ১২০০ – ১৫০০ টাকার কমে যাবে না। আমি ৮০০ টাকায় গিয়েছি। আমরা খুব ভাগ্যবান যে চমৎকার একজন মানুষকে আমাদের টমটম গাড়ির ড্রাইভার হিসেবে পেয়েছিলাম। তিনি আমাদেরকে চোখে হাত দিয়ে দেখিয়েছেন মানুষকে পয়সা দিয়ে বিচার করার কোন সুযোগ নেই। গরীব মানুষের হৃদয় অনেক বড় হয়। আমাদের প্রতি তার আন্তরিকতা সৎ পরামর্শ এবং আতিথিয়েতা সেটাই প্রমান করে। কক্সবাজারে আমরা যে ৫ দিন ছিলাম, তিনি আমাদের সাথেই ছিলেন কখনও গাইড হয়ে, কখনও ফটোগ্রাফার হয়ে, কখনও চালক হয়ে। কেউ যদি চান, তার নাম্বারটা আমি দিয়ে দিতে পারি।
৪। মেরিন ড্রাইভ রোডের মাঝামাঝি পেঁচার দ্বীপের আগে একটা রিজোর্ট করেছে নাম সাম্পান। যদি জোয়ার থাকে তাহলে সেখান থেকে সুর্যাস্ত দেখাটা দুর্দান্ত একটা অভিজ্ঞতা হতে পারে। বলা বাহুল্য সেখানে বসতে আপনাকে কোন টাকা খরচ করতে হবে না। চাইলে আপনি অর্ডার করতে পারেন। যাওয়া যাওয়া সব মিলিয়ে আপনার ৫০০/৬০০ টাকার মত খরচ হতে পারে। টুরিষ্ট পুলিশ আছে। অন্তত সন্ধ্যা ৮ টা নাগাদ নিরাপত্তার তেমন কোন সমস্যা নেই বলেই আমার মনে হয়েছে।
৫। কক্সবাজারে যদি আপনি নতুন হন, আর টমটমের ভাড়া সম্পর্কে না জানেন, তাহলে আপনাকে তারা একেবারে জবাই করে দিবে। যেমন কলাতলী রোডের ওশান প্যারাডাইস হোটেল থেকে বিখ্যাত পৌষি রেষ্টুরেন্টের ভাড়া ৪০/৫০ টাকা। আপনাকে একটু নতুন মনে হওয়া মাত্রই সেই ভাড়া চাওয়া হবে ৯০ – ১২০ টাকা পর্যন্ত। সুতরাং যেখানেই যান না কেন, ভাড়া আগেই ঠিক করে যাবেন। তবে আশার কথা অধিকাংশ টমটম ড্রাইভারই ভালো।
৬। খাওয়া দাওয়া যেখানেই করেন না কেন, আমি অনুরোধ করব, যে কোন একদিন সকালে পৌষি রেষ্টুরেন্টে নাস্তা করতে। তাদের খিচুড়িটা মনে রাখার মত। তবে যা আপনাকে খেতেই হবে তা হলো পরটা বা নান দিয়ে আলু গোসতের ঝোল। অমৃত মনে না হলে, পোস্টে রিপোর্ট করতে পারেন। কলাতলী রোডে যে কোন হোটেলে খাওয়ার চাইতে, একটু কষ্ট করে এসে যদি এই হোটেলে খান, তাহলে অন্তত আপনি দাম দিয়ে ভালো জিনিস খাবেন, আপনাকে স্বাদ নিয়ে চিন্তা করতে হবে না।
৭। শুটকি যারা পছন্দ করেন, তাদের জন্য অনুরোধ, কলাতলী রোড বা বার্মিজ মার্কেট থেকে শুটকি কিনবেন না। শুটকি কিনতে একটু কষ্ট করে পুরাত শুটকি মার্কেট বা বড় বাজারের শুটকি মার্কেটে চলে যান। সেখানে আপনি অনেক দোকান পাবেন। আপনি প্রথমেই সব দোকানে একটু ঢুঁ মারবেন, বিভিন্ন দামের শুটকি দেখেন। আপনার চেষ্টা থাকবে ১০ টাকা বেশি দিয়ে হলেও কীটনাশক ও লবন মুক্ত শুটকি মাছ কেনার জন্য। আমি অবশ্য একটা নাম সাজেস্ট করতে পারি। তিনি হলেন বশির সওদাগর। তার কাছ থেকে কক্সবাজারের বড় বড় হোটেল এবং স্থানীয়রা শুঁটকি কিনে থাকেন। তার কাছে লইট্ট্যা শুটকির ৩ পদ দেখেছি, সর্ব নিম্ন ৩৮০, মাঝারিটা ৪৫০ টাকা আর সবচেয়ে ভালোটা ৫৫০ টাকা। ঢাকাতে এই ৩৮০ টাকার শুঁটকি ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়। ছুরি শুঁটকি পাবেন ৯০০ টাকা কেজি। রুপ চান্দা পাবেন ১৫০০ টাকা কেজি। রুপ চান্দা দুইটা আছে। একটা কালো আর একটা সাদা। কালোটার দাম কিছুটা কম আর সাদাটার দাম কিছুটা বেশি। সবাই যদিও সাদাটাই খুঁজে, আমি কালোটাই কিনেছি। এটার স্বাদ আমার ভালো লেগেছিলো।
৮। বার্মিজ মার্কেটে রাতে বেড়াতে গেলে সাবধান। এখানে পকেটমার ও নানান ধরনের আজেবাজে লোক ঘুরাফেরা করে। এই সব কাজ দিনের বেলা সেরে ফেললেই ভালো। মনে রাখবেন ঘুরতে গিয়ে বেলা ১২ টা পর্যন্ত ঘুমানো কোন কাজের কথা না।

No comments:

Post a Comment

Adbox