পিঙ্ক সিটি বা গোলাপী শহর

পিঙ্ক সিটি বা গোলাপী শহর নামে সুপরিচিত রাজস্থানের রাজধানী জয়পুর। রাজস্থান ভারতের পর্যটন স্থানগুলির একটিতে যুক্ত হয়েছে ভারতীয় গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গলের তৃতীয় কোণ হিসেবে। জয়পুর দিল্লীর দক্ষিন -পশ্চিমে ৩০০ কি.মি.দুরে, তাজমহল খ্যাত আগ্রা থেকে পশ্চিমে ২০০ কি.মি.দুরে অবস্থিত। শহরের তিনদিকে রয়েছে পাহাড়। এখানে দেখা যায় দুর্গ এবং মিনার।পুরো শহর যেন গোলাপী রং এ একাকার হয়ে আছে। রাজা দ্বিতীয় রামসিং গোলাপী রং খুব ভালবাসতেন বলেই প্রতিটি বাড়ি এবং দোকানে গোলাপী রং করার আদেশ দেন।
জয়পুর শহর গড়ে তুলে রাজা জয়সিং। তার নামানুসারে এই শহরের নাম জয়পুর করা হয়। জয়পুরের অন্যতম আকর্ষন হল হাওয়া মহল। বিচিত্র শিল্প নৈপূন্যে ভরা এই প্রসাদটি পাঁচতলা বিশিষ্ট। প্রতাপসিং ১৭৯৯ খ্রিষ্টাব্দে এটি নির্মান করেন। স্যার এডুইন এনরোল্ড হাওয়া মহলের সৌন্দর্য্য দেখে বলেছিল’ আলাদিনের আশ্চর্য্য প্রদিপও এত সুন্দর মহল বানাতে পারতোনা। শোনা যায় হাওয়া মহলে বসেই রানীরা উত্‍সব দেখতো। ভবনটির পেছনে রয়েছে ৩৬০ টি জানালা আর অভ্যান্তরে রয়েছে স্নান কুন্ড। জয়পুরে দেখার মত আছে গোবিন্দজীর মন্দীর, জলমহল, অম্বর প্যালেস, কালী মন্দীর, জয়মনি মন্দীর, দেওয়ান-ই-আজম, দেওয়ান -ই-খাস, সুখমন্দীর, সিটি প্যালেস মিউজিয়াম, নাহারগড় দুর্গ প্রভৃতি।
প্রাকৃতিক হ্রদের মধ্যে অবস্থিত জলমহলটি সত্যি দেখার মত। শহর থেকে ৭ কিঃমি দুরে অবস্থিত। একসময় রাজাদের গ্রীষ্মকালীন অবকাসের স্থান ছিল এটি। হ্রদটির নাম মানসাগর।
এর একটু দুরেই রয়েছে মানসিং দুর্গ। সপ্তাদশ শতকে নির্মিত এই দুগের্রর সুরক্ষা ও নিরাপত্তা জোড়দার করার জন্য রয়েছে কয়েক মাইল দীর্ঘ চওড়া পরীখা। এই জায়গার নাম অম্বর যা পূর্বে রাজস্থানের রাজধানী ছিল এবং জয়পুর থেকে ১১ কি.মি. দুরে অবস্থিত। মানসিংস দুর্গের সিড়ি দিয়েই ঢুকে দেখা যাবে কালীমন্দীর ।অম্বর রাজপ্রাসাদের কাছেই রয়েছে একটি মসজিদ। এটির নাম অম্বর মসজিদ। সম্রাট আকবর এটি নির্মান করেন।
কেন্দ্রিয় যাদুঘর পুরাতন নগরীর দক্ষিণাংশে রাম নিবাস গার্ডেনে অবস্থিত। এই যাদুঘর জয়পুরের মহারাজার দুর্লভ পোর্ট্রেট, সাজ পোশাক, জয়পুরের বিভিন্ন স্থানের কাঠের কাজ এবং অন্যান্য অণুচিত্র ও শিল্পকলা স্থান পেয়েছে। এখানে বাগানে ছোট একটা চিড়িয়াখানা ও আর্ট গ্যালারী রয়েছে।অপুরুপ সৌন্দর্য্য আর স্থাপত্যে ভরা শহরটির গল্প তখনই সত্য মনে হবে যখন এক নজর দেখবেন আপন দৃষ্টির আলোয়।
কখন যাবেনঃ অক্টোবর ও মার্চ মাস হলো জয়পুর ভ্রমনের শ্রেষ্ঠ সময়।
যাওয়া ও থাকাঃ ঢাকা থেকে কলকাতায় যাবেন।কলকাতা থেকে জয়পুর যাওয়ার সরাসরী ট্রেন ব্যবস্থা রয়েছে। যোধপুর এক্সপ্রেস রাত ১১টায় হাওরা থেকে ছেড়ে ৩০ ঘন্টায় জয়পুর গিয়ে পৌছায়। অভ্যন্তরীন ফ্লাইটেও দিল্লি, মুম্বাই, কলকাতা থেকে জয়পুর যাওয়া যায়। এছাড়া বাস ও ভাড়া গাড়িতেও যাওয়া সম্ভব।
এখানে থাকার জন্য রাজস্থান পর্যটন উন্নয়ন নিগমের হোটেল গাঙ্গুরা রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে কিছু প্রাইভেট হোটেল। যেমনঃ হোটেল চন্দ্রালোক, অশোকা, চন্দ্রবিলাস, গোল্ডেন ইন এবং মমতা প্রভৃতি।

No comments:

Post a Comment

Adbox