আগ্নেয়গিরির কথা কম বেশি সবাই জানেন। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য জীবন্ত আগ্নেয়গিরি। ভয়ঙ্কর এই সব আগ্নয়গিরি জেগে ওঠার খবর আররা প্রায়ই গণমাধ্যমে দেখতে পাই। এখন আমরা বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর কিছু জীবন্ত আগ্নেয়গিরি সম্পর্কে জানবো।
১. মাউন্ট এটনা, ইতালি: ইউরোপের সর্বোচ্চ আগ্নেয়গিরি মাউন্ট এটনা। ইতালির সিসিলি দ্বীপের ক্যাটানিয়া শহরে মাউন্ট এটনার অবস্থান। গত কয়েক যুগ ধরে থেমে থেমে এ আগ্নেয়গিরি থেকে অগ্ন্যুত্পাত ফের শুরু হয়েছে। তবে ১৯৯২ সালের পর অগ্ন্যুত্পাতের কারণে বড় কোনো অঘটন ঘটেনি। চলতি বছর এবার নিয়ে দুই দফা আগ্নেয়গিরিটির অগ্ন্যুত্পাত হয়েছে। ধোঁয়া ও আগুনের স্ফুলিঙ্গ এত উঁচুতে উঠে যায় যে, পূর্ব সিসিলি থেকেও তা দেখা যাচ্ছিল। এমন অবস্থায় কর্তৃপক্ষ ক্যাটানিয়া শহরের কাছের বিমানবন্দরটি সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়। তবে অবাক হওয়ার মতো বিষয় হচ্ছে-অগ্ন্যুত্পাতের পরও পাহাড়টির ঢালে বসবাসরত কোনো পরিবারকে সরিয়ে নেওয়া হয়নি। হবেইবা কেন, এটি একটি নিরীহ আগ্নেয়গিরি।

২. মাউন্ট নিরাগঙ্গো, কঙ্গো: আফ্রিকার কঙ্গোতে অবস্থিত মাউন্ট নিরাগঙ্গো সবচেয়ে বড় সক্রিয় আগ্নেয়গিরি। ১৮৮২ সাল থেকে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৩৪ বার বিস্ফোরণ ঘটে এবং এটিই পৃথিবীর সবচেয়ে বড় লাভা হ্রদ। ১৯৭৭ সালে আগ্নেয়গিরির মুখের বিস্ফোরণের ফলে ঘন্টায় ৬০ মাইল গতিতে লাভা পাশে থাকা গ্রামের দিকে ছুটে যায় এবং বিপর্যয় বয়ে আনে। তখন মৃত্যুর পরিমাণ ছিল ৭০ জনেরও বেশি। আগ্নেয়গিরির মুখে থাকা প্রাচীর গলতে ১ ঘন্টারও কম সময় লেগেছিল এবং এই লাভা হ্রদের গভীরতা ছিল এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ পরিমান দশ হাজার সাত’শ ফিট।

৩. মাউন্ট মেরাপি, ইন্দোনেশিয়া: ইন্দোনেশিয়ার জাভা দ্বীপের যোগজাকার্তা শহরের কাছে অবস্থিত মাউন্ট মেরাপিতে প্রথম অগ্ন্যুৎপাত শুরু হয় ২০১০ সালে। তবে আগেভাগেই আঁচ পেয়ে কর্তৃপক্ষ আশেপাশের গ্রাম থেকে প্রায় ১১,০০০ মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়ে যাবার কাজ শুরু করেছিল৷ তা সত্ত্বেও কিছু মানুষ সেখানে থেকে যায়৷ স্থানীয় হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, মৃতের সংখ্যা ২৮৷ অনেকে মারাত্মক গরম বাতাস সহ্য করতে পারে নি, অনেকে সরাসরি লাভার সংস্পর্শে এসে পুড়ে গেছে৷ তাদের সনাক্ত করাও সম্ভব নয়৷ মৃতদের মধ্যে রয়েছেন মবাহ মারিদজান, স্থানীয় মানুষ যাঁকে পাহাড়ের আধ্যাত্মিক তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে গণ্য করতেন৷ তাঁর অলৌকিক শক্তি ছিল বলেও অনেকের বিশ্বাস৷

৪. মেগাটন ভিসুভিয়াস, ইতালি: এটা মহাদেশীয় ইউরোপের শুধুমাত্র একটি সক্রিয় আগ্নেয়গিরি এবং শেষ ১৯৪৪ সালে এর অগ্নিগর্ভ থেকে অগ্নি বের হয়। বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল আগ্নেয় অঞ্চল হিসেবে এর পার্শ্ববর্তী এলাকা পরিচিত। আগ্নেয়গিরি এখন ভিসুভিয়াস ন্যাশনাল পার্ক এর একটি অংশ। ভিসুভিয়াসের পুরাণ এবং স্থানীয় সংস্কৃতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। আগ্নেয় শক্তি অনুভব করার জন্য এটি একটি নিখুঁত জায়গা এবং এখানে আপনি ধূমায়মান জ্বালামুখ দেখতে পারবেন। পম্পেই এর ধ্বংসাবশেষ, লাভার বর্জ্যে এবং পিয়াল বে এর সুন্দর দৃশ্য দর্শকদের আকৃষ্ট করতে যথেষ্ট। ভিসুভিয়াস নিঃসন্দেহে আকর্ষণীয় আগ্নেয়গিরির তালিকায় শীর্ষ স্থান দখল করে।

৫. আরেনাল আগ্নেয়গিরি, কোস্টারিকা: আরেনাল লাভা একটি সক্রিয় আগ্নেয়গিরি যা থেকে ঘন ঘন বিস্ফোরণ সংঘটন হয়। তার শেষ অগ্ন্যুত্পাত হয়েছিল ১৯৬৮ সালে, তখন টাবাকন শহরের অধিকাংশ স্থান ধ্বংস হয়ে যায়। লাভার প্রবাহ দেখার জন্য এটি একটি আদর্শ গন্তব্যস্থান। এই আগ্নেয়গিরিটি আরেনাল আগ্নেয়গিরি ন্যাশনাল পার্ক দ্বারা বেষ্টিত। উদ্ভিদকুল ও প্রাণিকুল ভোগবিলাসপূর্ণ ছাড়াও, পর্যটকরা এখানে ট্রেকিং , সাঁতার এবং পর্বতে সাইকেল অশ্বারোহণ এর মত বিভিন্ন কার্যক্রম উপভোগ করতে পারেন। পার্কের অনেক স্থানে গরম পানির স্নানের ব্যবস্থা রয়েছে, যা পর্যটকদের মধ্যে একটি প্রিয় কার্যকলাপ।

No comments:
Post a Comment